প্রভুমীশমণীশ-মশেষগুণম্  গুণহীনমহীশ-গরলাভরণম্।

রণনির্জ্জিত-দুর্জ্জয় দৈত্যপুরং প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম্॥

 

দেবাদিদেব মহাযোগী শিব সৃষ্টির আদি দেবতা , হিন্দু জাতির পরম আরাধ্য। সনাতন হিন্দু ধর্মের বর্ণাশ্রম প্রথা পরবর্তী কালে নানা জাতি ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যায়। তেমনি একটি সম্প্রদায় নাথ যোগী সম্প্রদায়। বলা হয় মহর্ষি গোরক্ষনাথের অনুগামী এই নাথ যোগী সম্প্রদায়। যে গোরক্ষনাথ ছিলেন সাক্ষাৎ শিবের অবতার স্বরূপ। এই গোরক্ষনাথের প্রদর্শিত পথই নাথ পন্থ বা নাথ পন্থা। নাথ পন্থের স্থাপনা মহর্ষি প্রদর্শিত সত্য , ত্যাগ ও আদর্শ মানবিক আচরণের অনুশীলনের ওপর। তাই একদিন এই পন্থাবলম্বীরা ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী মানী ও বৈরাগ্যের পরাকাষ্ঠা।

President

কিন্তু ভারতবর্ষের ইতিহাস উত্থান পতনের ইতিহাস। এখানকার জনগোষ্ঠী বিভিন্ন জনজাতির সংমিশ্রন যা রবিঠাকুরের ভাষায় ‘শক হূণ দল পাঠান মোগল এক দেহে হলো লীন। ‘ সেই পথে হেঁটে শক্তিশালী রাজার উদ্ধত অত্যাচারে এই সম্প্রদায়ও চরম অবক্ষয়ের শিকার হয়ে প্রায় অবলুপ্তির পথে চলে যায়। যাঁরা জ্ঞান গরিমায় সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন, নিতান্ত প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে অত্যন্ত দীন হীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে নিজ জাতি গৌরব বিস্মৃত হন।

ডাঃ রাধাগোবিন্দ নাথ যাঁর স্বপ্ন ছিল এই সম্প্রদায়ের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনা ,বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া ঋষিকল্প জীবন যাপন পুনর্বার রবি কিরণে উদ্ভাসিত করা। এই উদ্দেশ্যে তাঁর পরিকল্পিত ও রূপায়িত নাথ যোগী সংঘঠন কালচক্রে আজ মহীরূহে রূপান্তরিত। কিন্তু এই যাত্রাপথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিলো না। বিভিন্ন সময়ে কতিপয় চিন্তাশীল উদ্যোগী পুরুষের বাধাবিঘ্ন কণ্টকিত প্রচেষ্টা আজ একে সফল করেছে।

আচার্যদেব ও ‘যোগিসখা’ প্রতিষ্ঠাতা নাথবন্ধু অরবিন্দ বন্ধু নাথ ব্যতিরেকে সাংগঠনিক রূপে  একবাক্যে স্মরণীয়দের মধ্যে  আছেন আচার্য  অম্বিকা চরণ নাথ (ঢাকা), নাথবন্ধু নাথ (চট্টগ্রাম)  ও প্রমথনাথ নাথ (নদীয়া)। তাঁদের প্রচেষ্টায় সম্মিলনীতে যোগিসখা পত্রিকার অন্তর্ভুক্তি, ‘যশোদা হরণ’  মামলায় বিজয়, ‘জাতিতত্ত্ব’-র  মামলা, যোগীদের হিন্দুবহির্ভূত করার তদানিন্তন আসাম সরকারের  অপচেষ্টা রোধ,  যোগিজাতির অবনত শ্রেণীভুক্তিতে বাঁধাদান, বিধবা বিবাহ ও  আন্তর্গণিক বিবাহের স্বপক্ষে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তী দশকগুলিতে মার্গদর্শনে স্মর্তব্যদের মধ্যে রয়েছেন    ভবেন্দ্রলাল নাথ, বদাপ্রসন্ন নাথ, ব্রজেন্দ্র কুমার দেবনাথ ও মন্মথনাথ সরকার । বহু  আকাঙ্ক্ষিত সম্মিলনীর নিজস্ব ভবন নির্মাণে যাঁদের  মুখ্য ভূমিকা ছিল তাঁরা হলেন সমরেন্দ্রনাথ চৌধুরী, ভবতোষ চৌধুরী, মনোরঞ্জন চৌধুরী, চিত্তরঞ্জন ভৌমিক, অমলেন্দু বিকাশ চৌধুরী, পরিমল কান্তি শিব ও নিরঞ্জন নাথ ভৌমিক প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ।এর যোগ্য প্রতিপালক ও সম্মিলনীর অগ্রগতির কাণ্ডারীরূপে ছিলেন ড. ননী গোপাল নাথ, যদুলাল ভৌমিক, রবীন্দ্র কিশোর নাথ, মনিলাল ভৌমিক, মানিক রঞ্জন দেবনাথ, ড. জীবনকৃষ্ণ নাথ ও আন্যান্য সকলে।  বর্তমানে তাঁদের অসমাপ্ত কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন  অধ্যাপক গোপালচন্দ্র দেবনাথ, ডাঃ সভাপতি নাথ, গৌতম দেবনাথ, তুষার রঞ্জন দেবনাথ, সমীরণ দেবনাথ প্রভৃতি কার্যকারকবৃন্দ।

বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তির হাত ধরে দৈনন্দিন জীবনকে করেছে অনায়াস লভ্য। বিশ্ব আগে ছিল মায়াজালে আবদ্ধ, এখন প্রযুক্তি জালে। মানবজীবনের অতীত বর্তমান কিছুটা ভবিষ্যৎও এই প্রযুক্তির কল্যাণে হাতের মুঠোয়। তাই এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান প্রজন্মের মানব শিশুরা তাদের নিজেদের চিন্তাভাবনাকে বিকশিত করছে। আমাদের মধ্যে  অনেকেই আছেন যাঁরা সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন পরিসেবা আধুনিক প্রযুক্তির  মাধ্যমে পেয়ে থাকেন অথচ সম্মিলনীর সদস্যপদ, বিজ্ঞাপন, যোগাযোগ বা অভাব-অভিযোগের বিষয়ে তাঁরা এতদিন সমস্তরকম সুবিধা থেকে বঞ্চিত । উন্নতিকামী পরিশ্রমী মেধাবী বিদ্যার্থীরা ছাড়াও এই সম্প্রদায়ের প্রতিটি স্তরের নাথ পন্থীগণ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রার্থিত জ্ঞাতব্য বিষয়ে অহরহ অবগত হতে পারবেন এই নতুন ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে এই আশাই রইলো।